কনভেনশনাল অর্থনীতি কিংবা বিজনেস এর বই গুলোতে সাধারণত সুদ ও মুনাফার মধ্যে পার্থক্য করা হয়না। ইসলামে যেহেতু সুদকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, তাই সুদ ও মুনাফার পার্থক্য নির্ণয় জরুরী।

“আল্লাহ’তাআলা ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন” (কোরআন, ২:২৭৫)

ইকোনমিক দিক থেকে বলতে গেলে সুদ যা করে তা হচ্ছে, ‘মুষ্ঠিমেয় কিছু লোকের কাছে সম্পদ পুঞ্জিভূত করতে প্রধান অস্ত্র হিসেবে কাজ করে’। ইসলামিক ইকোনমি’র একটা উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে নিম্নের আয়াতে।

“যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান শুধু তাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য্য আবর্তন না করে” (কোরআন, ৫৯:৭)

তাই সুদকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে, যেহেতু সুদ সম্পদকে বিত্তবানদের হাতে পুঞ্জিভূত করে। তাই ইসলাম সুদের সাথে জড়িত দের চিরস্থায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করেছে।

“এবং যারা (সুদ) পুনঃগ্রহণ করবে তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে” (কোরআন, ২:২৭৫)

যাই হোক, সুদ কীভাবে সম্পদকে বিত্তবানদের হাতে পুঞ্জিভূত করে তা আজকের আলোচনার বিষয় নয়। এই আর্টিকেলে খুব সংক্ষেপে এই বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে।

প্রফিট কি?

আল্লাহ্‌ কোরাআনে সুদ কে হারাম করে এর বিকল্প যা দিয়েছেন তা হচ্ছে ‘আল-বাই’ বা বাণিজ্য, ট্রেড।

“আল্লাহ’তাআলা ব্যবসায়কে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন” (কোরআন, ২:২৭৫)

ধরুন, আপনার কাছে ২ কেজি চাল আছে। এখন আপনি ১ কেজি চাল ভোগ করার পর ২য় কেজি আর এখন খেতে আগের মত ইচ্ছুক নন। একজন মানুষ যখন কোন কিছুর ১ম ইউনিট ভোগ করে, ২য় ইউনিট ভোগ করার প্রতি আস্তে আস্তে তার আগ্রহ কমে যায়। অর্থনীতির ভাষায় এটাকে বলে ‘ডিমিনিশিং মার্জিনাল ইউটিলিটি’। ধরা যাক, ১ম কেজি চাল ভোগ করে সে ১০০ ইউটিলস[] পেয়েছে আর ২য় কেজি ভোগ করার পর পেয়েছে ৫০ ইউটিলস। তাহলে তার মোট ইউটিলিটি বা সেটিসফেকশন এর পরিমাণ হল ১০০ + ৫০ = ১৫০ ইউটিলস।

দেশে আরেকজন ব্যক্তির কথা চিন্তা করুন, যার ২ কেজি ডাল আছে। এবং ১ম ব্যক্তির মতো ১ম কেজি ডাল ভোগ করে সে পেল ১০০ ইউটিলস এবং ‘ডিমিনিশিং মার্জিনাল ইউটিলিটি’ অনুসারে ২য় কেজিতে পেল ৫০ ইউটিলস। সর্বমোট তার সেটিসফিকশন এর পরিমাণ ১০০+৫০ = ১৫০ ইউটিলস।

এখন একটা দেশে যদি শুধু এই দু’জন ব্যক্তিই থাকে, তাহলে পুরো ইকোনমিতে টোটাল সেটিশফেকশান কত? ১ম ব্যক্তির ইউটিলস + ২য় ব্যক্তির ইউটিলস = ১৫০+১৫০ = ৩০০ ইউটিলস।

আমাদের সবসময় উদ্দেশ্য থাকে নিজের সন্তুষ্টি বা সেটিসফিকশন বাড়ানো। ইকোনমি’র ভাষায় ইউটিলিটি বাড়ানো। এখন এই দুই ব্যক্তি একে অন্যের সাথে ট্রেড (আল-বাই) করল, যা কোরআনে ‘সুদ’ এর বিকল্প হিসেবে দেয়া হয়েছে। ট্রেড এর ফলে ১ম ব্যক্তি ২য় ব্যক্তিকে ১ কেজি চাল দিল এবং ২য় ব্যক্তি ১ম ব্যক্তিকে ১ কেজি ডাল দিল।

প্রত্যেকে নতুন দ্রব্য থেকে ১০০ ইউটিলস করে সাটিসফেকশন পাবে, যেহেতু এর পূর্বে তারা এটা ভোগ করে নি। তাহলে ১ম ব্যক্তির কাছে আছে ১ কেজি চাল (১০০ ইউটিলস) এবং ১ কেজি ডাল (১০০ ইউটিলস), মোট ইউটিলিটি’র পরিমাণ হল ১০০ + ১০০ = ২০০ ইউটিলস। তদ্রুপ ২য় ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটবে। এখন প্রত্যেকের লাভ কত করে হল?  ৫০ ইউটিলস করে। অর্থাৎ আগে সেটিসফেকশান এর পরিমাণ ছিল ১৫০ ইউটিলস, আর ট্রেড এর ফলে হলো ২০০ ইউটিলস। মোট ইকোনমিতে ইউটিলিটির পরিমাণ হলো ২০০+২০০ = ৪০০ ইউটিলস। ট্রেড এর আগে যা ছিল ৩০০ ইউটিলস। এই প্যারাটি খুব মনোযোগ দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করুন, পুরো আর্টিকেল এর কি-পয়েন্ট এখানেই।

সোজা কথায়, প্রফিট বা মুনাফা হলো ‘মার্জিনাল ইউটিলিটি’র মোট বৃদ্ধি’ ( Total Increase in Marginal Utility)। অর্থাৎ ট্রেড এর ফলে উভয়পক্ষের যে মার্জিনাল ইউটিলিটি বৃদ্ধি পায়, তাই হচ্ছে মুনাফা। কোরআনের নিম্নের আয়াত এই বিষয়টিরই সমর্থন করছে।[২]

“হে মুমিনগণ! তোমরা পরস্পরের সম্মতিক্রমে ব্যবসা ব্যতীত অন্যায়ভাবে পরস্পরের ধন-সম্পত্তি গ্রাস করোনা … ।” (কোরআন, ৪:২৯)

তাহলে বাণিজ্যের ফলে-

০১। অর্থনীতিতে কোন সম্পদ বৃদ্ধি না পেলেও মোট সেটিসফেকশন (ইউটিলিটি) বৃদ্ধি সম্ভব।

০২। উভয় পক্ষই লাভবান হয়, এটা ‘জিরো সাম গেম’ নয়, যেখানে শুধু এক পক্ষ লাভবান হয়, যেমনঃ সুদ, জুয়া, লটারী ইত্যাদি।

০৩। মুনাফা লাভ সম্ভব।

উপরের উদাহরণগুলো, বার্টার ইকোনমির। মানিটারি ইকোনমিতে মানি’কে যেহেতু ‘ভ্যালু পরিমাপক হিসেবে’ ধরা হয়, তাই ইউটিলিটিকেও শুধু মানিটারি টার্মে কনভার্ট করা হবে।

সুদ কী?

সুদ হল, আমি আপনাকে ১ কেজি চাল ধার দিলাম এবং ১ বছর পর আপনি আমাকে ২ কেজি চাল দিবেন, এই ১ কেজি চালের দাম যদি ১০০ টাকা ধরা হয়, তবে আমি আপনাকে ১০০ টাকা দিলাম, ১ বছর পর আপনি আমাকে ২০০ টাকা দিবেন। এই যে বাকী ১০০ টাকা আপনি আমাকে দিবেন, এর বিপরীতে আমি আপনাকে কি দিচ্ছি? এখানে কাউন্টার ভ্যালু কোথায়? কিছুই না। এভাবেই যাদের কাছে অর্থ আছে তারাই আরো সম্পদ বাড়াচ্ছে কোন ঝুঁকি ছাড়াই। কারণ আধুনিক ‘ব্যাংক’ গুলো যখন লোন দেয়, তখন সিকিউরিটি হিসেবে আপনার কোন সম্পদ (কোলাটেরাল) জমা রাখে, তাই আপনি পরে সুদসহ মূলধন ফেরত না দিতে পারলেও ব্যাংকের (আধুনিক জমিদার) কোন চিন্তা নেই।

সুদ হল, ঋণ থেকে পাওয়া অতিরিক্ত অর্থ, যা ঋণগ্রহীতা ঋনদাতাকে দিয়ে থাকে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ নোট

ইসলাম ‘অর্থ (Money)’ কে কোন প্রোডাক্ট বা পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়না। অর্থাৎ অর্থের বিনিময়ে কোন বাড়তি অর্থ গ্রহণই সুদ। অর্থ হচ্ছে ‘মিডিয়াম অব এক্সচেঞ্জ’ বা ‘বিনিময়ের মাধ্যম’। কিন্তু সেক্যুলার অর্থনীতিতে ‘অর্থ’ নিজেই একটি কমোডিটি বা পণ্য, যার বিনিময়ে (অন্য কোন পণ্যের বিনিময় ছাড়াই) বাড়তি অর্থ নেয়া বৈধ।

উপরের উদাহরণে চলে যাওয়া যাক। ১ম ব্যক্তির কাছে ২ কেজি চাল আছে, এখন এই ২ কেজি চাল উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১৫০ টাকা। এখন এই ব্যক্তি এগুলো বিক্রয় করল ২০০ টাকা মূল্যে। এখানে প্রফিট হল ৫০ টাকা।

১ম ব্যক্তিটি এখানে ‘ঝুঁকি নিচ্ছে, কারণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি ক্রেতা পাওয়া না যায়, তবে সব চালই নষ্ট হয়ে যাবে, ক্রেতা খোঁজার জন্য তাকে কাজ করতে হচ্ছে, প্রচেষ্টা করতে হচ্ছে এবং সর্বপরি ক্রেতা যদি চাল কিনে নিয়ে বিক্রেতার কথা মতো সঠিক চাল না পায় তবে বিক্রেতাকে চাল ‘পরিবর্তন’ করে দিতে হবে, এখানে লাইবিলিটি বা দায় থাকতেছে।

ইসলামী অর্থনীতির পরিভাষায়, এই (০১)ঝুঁকি (০২)কাজ ও প্রচেষ্টা এবং (০৩)দায় গ্রহণ এই তিনটিকে বলে কাউন্টার ভ্যালু, যা বিক্রেতাকে তার পণ্যের জন্য বাড়তি ৫০ টাকা বেশী মূল্য গ্রহণে বৈধতা দেয়।

ইবনু আল’আরাবীর (মৃত্যু ১১৪৮ খ্রিস্টাব্দ) মতে, “যেকোন বৃদ্ধি যাতে সমপরিমাণ কাউন্টার ভ্যালু নেই তাই রিবা (সুদ)”।[৩]

মূল কথা হলঃ

০১। ঋণ থেকে পাওয়া অতিরিক্ত অর্থ সুদ। অতিরিক্ত অর্থের জন্য কোন কাউন্টার ভ্যালু নেই এবং সম্পদ কিছু লোকের হাতে পুঞ্জিভূত হচ্ছে।

০২। পণ্য বিনিময় থেকে পাওয়া অতিরিক্ত অর্থ মুনাফা, যার কাউন্টার ভ্যালু হল ঝুঁকি, দায়, কাজ ও প্রচেষ্টা। ট্রেড এর ফলে উভয়েই উপকৃত হয়।

Islamic radio airs Quran recitations, lectures, music, and community announcements.

Support

Help Centre

FAQ

Contact Us

Community

Company

About Us

Careers

News & Articles

Get In Touch

Copyright © 2024 – Islami Radio Developed By Rushda Soft

Notice: ob_end_flush(): Failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home/islamiradio/public_html/wp-includes/functions.php on line 5427